চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়।আপনাদের মাথার চুল পড়ে বা উঠে যাচ্ছে
তাহলে আজকের অ্যার্টিকেলটি আপনার জন্য।কারণ এই আর্টিকেলে থাকতেছে চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া
উপায়, চুল পড়ার কারণ, ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করার
কার্যকর কিছু পদ্ধতি, চুল পড়া কমাতে যেসব তেল ব্যবহার করা হয় এবং
সঠিক পদ্ধতিতে তেল ব্যবহার করা, ঘন ও মজবুত রাখা আরো ইত্যাদি নিয়ে আজকের
আর্টিকেল।
তো আজকের আর্টিকেলটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। কারণ আমাদের
অনেকেরই সমস্যা, মাথার চুল পড়ে যায়। এ মাথার চুল পড়া কিভাবে বন্ধ করব
এই নিয়ে আজকের আলোচনা। তো আজকে আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক
পোষ্ট সূচিপত্রঃচুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চুলকে সৌন্দর্যের অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা
করেছে। পৃথিবীর সব প্রাচীন সভ্যতাতেই সুন্দর চুল এবং চুলের যত্ন নিয়ে
মানুষের আগ্রহের কথা জানা যায়। অতীতে এক সময় মনে করা হতো ঘন, লম্বা, ঝলমলে
চুল ছাড়া সৌন্দর্য অসম্পূর্ণ। বর্তমানে এই মানসিকতা কিছুটা বদলালেও এখনো
সুস্থ, ঝলমলে চুল সৌন্দর্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে আধুনিক নাগরিক
জীবনের ব্যস্ততা, পরিবেশ দূষণ, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ চুলের
সমস্যা সৃষ্টি করে। চুলের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে
প্রচলিত হলো চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়া। আজকাল নারী-পুরুষ
নির্বিশেষে সকলেই এই সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন বিশেষায়িত চিকিৎসা পদ্ধতি
ছাড়াও ঘরোয়া প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে চুল পড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব।
নিয়মিত যত্ন এবং ঘরোয়া টোটকা অবলম্বন করে চুল পড়া কমানো যায় এবং ধীরে ধীরে
চুল ঘন, স্বাস্থ্যোজ্বল হয়। এখানে আমরা চুল পড়ার বন্ধ করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে
বিশদভাবে আলোচনা করব।
চুল পড়ার কারণ কী কী?
চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ কাজ করে। চুল পড়ার
সমস্যা সমাধানের জন্য আগে সেই সমস্যার কারণ খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ,
যাতে সমস্যাটির সঠিক এবং সমাধান কার্যকরী সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা
যায়।
- পুষ্টিহীনতা: বাংলাদেশে মানুষের চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ হলো পুষ্টিহীনতা। প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এবং মিনারেল-এর অভাব চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
- হরমোনের সমস্যা: চুল পড়ার সাথে বিভিন্ন রকম হরমোনজনিত অসুখের নিবিড় যোগাযোগ আছে। থাইরয়েড ও অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যহীনতা চুল পড়া এবং চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। নারীদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) হলে অস্বাভাবিকভাবে চুল পড়ে; ফলে চুল পাতলা হয়ে যায়। তাছাড়া মেনোপজ, গর্ভাবস্থা এবং সন্তান জন্মদানের পর হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রচুর চুল পড়ে।
- ওষুধের প্রভাব: বিভিন্ন রোগে ব্যবহৃত ওষুধ চুল পড়ার জন্য দায়ী। ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কেমোথেরাপির কারণে মাথার সব চুল পড়ে যায়। তাছাড়া বিভিন্ন রকম স্টেরয়েড অন্যান্য ওষুধেও চুল পড়ে।
- রসায়নিক এবং তাপের প্রভাব: বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকযুক্ত হেয়ার ট্রিটমেন্ট চুল পড়ার কারণ। হেয়ার কালার, পার্ম, স্ট্রেইটনার এবং হেয়ার ড্রায়ার চুলকে দুর্বল করে। এতে চুল পড়ে যায়।
- বংশগত কারণ: কারো পরিবারে চুল পড়া বা টাক পড়ার ইতিহাস থাকলে চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকেরই বংশগত কারণে চুল পাতলা হয় বা টাক পড়ে যায়।
- দূষণ: দূষণ, ধুলাবালি ইত্যাদি চুলের ক্ষতি করে। ফলে চুল পড়া বৃদ্ধি পায়।
- মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব চুল পড়ার কারণ
- চুলের সমস্যার সাথে অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং মানসিক চাপের সম্পর্ক আছে। দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায় এবং চুল ঝরে পড়ে। ঘুম কম হলেও চুল পড়ে। অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত ঘুম, অল্প পানি পান এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ( যেমন অতিরিক্ত জাংক ফুড গ্রহণ) চুলের ক্ষতি করে। এগুলো চুল পড়ার কারণ হিসেবে কাজ করে।
ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করার কার্যকর পদ্ধতি
বর্তমানে চুল পড়া একটি বহুল প্রচলিত সমস্যা। চুল পড়া বা পাতলা হয়ে যাওয়ার
সমস্যা শুধুমাত্র সৌন্দর্যের সাথে সম্পর্কিত নয়; কারণ চুল পড়া বা পাতলা হয়ে
যাওয়া মানুষের আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়। কোনো বড় ধরনের অসুস্থতা না থাকলে
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে চুল পড়ার সমস্যা কমানো যায়।
নিচে এমন কিছু সহজ, ঘরোয়া পদ্ধতি আলোচনা করা হলো -
- ঘরোয়া আয়ুর্বেদিক হেয়ার প্যাক: চুল পড়া কমাতে আয়ুর্বেদিক হেয়ার প্যাক বেশ কার্যকর। আয়ুর্বেদিক হেয়ার প্যাক বানাতে প্রয়োজন ব্রাহ্মী, ভৃঙ্গরাজ, আমলকি, নিম। হেয়ার প্যাক বানাতে ২ চা চামচ আমলকি গুঁড়া, ১ চা চামচ ব্রাহ্মী ও ভৃঙ্গরাজের গুঁড়া নিয়ে হালকা গরম জল দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পেস্টটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট রাখার পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেস্টটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। এই প্যাক ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয়, নতুন চুল গজায় এবং চুল পড়া কমে।
- আমলকি ও মেথি বীজের হেয়ার মাস্ক: চুল পড়া কমাতে আমলকি ও মেথি বীজের হেয়ার প্যাক অত্যন্ত কার্যকর। এই হেয়ার প্যাক বানাতে একটি বাটিতে ২ টেবিলচামচ আমলকি গুঁড়া এবং ১ টেবিলচামচ মেথি গুঁড়া নিন। এই মিশ্রণের সাথে প্রয়োজনমতো অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরী করুন। এই পেস্টটি সারা মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে ৪৫ মিনিট রাখুন। ৪৫ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই মাস্ক চুলের গোড়া শক্ত করে, বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং খুশকি প্রতিরোধ করে।
- টকদই ও মধুর হেয়ার প্যাক: দই একটি প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক এবং মধু আর্দ্রতা বজায় রাখে। টকদই এবং মধুর হেয়ারপ্যাক চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং চুল পড়া কমায়। এই প্যাক বানাতে ২ চা চামচ টকদই ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করুন। মিশ্রণটি চুলে প্রয়োগ করুন এবং ৩০ মিনিট রাখুন। ৩০ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ডিমের হেয়ার মাস্ক: ডিম প্রোটিন এবং বায়োটিনের উৎস। তাই ডিমের হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, চুল নরম হয় এবং চুল পড়া কমে। মিশ্রণটি বানাতে ১টি ডিম ফাটিয়ে হালকা ফেনা তৈরি করুন। ফেটানো ডিমের ১ টেবিলচামচ টকদই মিশিয়ে চুলে লাগান এবং ২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফল পেতে সপ্তাহে একবার মাস্কটি ব্যবহার করুন।
- অ্যালোভেরা জেল হেয়ারপ্যাক: অ্যালোভেরা জেল প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে যা চুলের ভাঙন রোধ করে। তাই নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করলে চুল ভালো থাকে। অ্যালোভেরা জেল হেয়ারপ্যাক বানাতে অ্যালোভেরা জেলের সাথে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার বা রোজমেরি এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে কয়েকবার চুলে লাগানো যেতে পারে। এটি চুল ভাঙা রোধ করে, চুল মসৃণ রাখে এবং চুল পড়া কমায়।
চুল পড়া কমাতে তেলের সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি
চুলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং চুল পড়া কমাতে তেলের ভূমিকা প্রশ্নাতীত।
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চুলের যত্নে বিভিন্ন রকম তেল ব্যবহার করে এসেছে।
সঠিক পদ্ধতিতে তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া অনেকটাই কমে যায়। চুলের যত্নে
সাধারণত নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল ইত্যাদি
ব্যবহার করা হয়। এখন আমরা চুল পড়া কমাতে তেলের সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে
আলোচনা করবো।
নারকেল তেলের ব্যবহার নারকেল তেল চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে। এতে লরিক
অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই থাকে, যা চুলের গোড়া শক্ত করে এবং নতুন চুল
গজায়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চুলের যত্নে নারকেল তেল ব্যবহার করে আসছে।
চুল পড়া কমাতে রাতে নারকেল তেল হালকা গরম করে নিন। তারপর হালকা গরম চুলের
গোড়ায় লাগান। তেল লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট ধরে চুলের গোড়ায় হালকা হাতে
ম্যাসাজ করুন। সারা রাত রেখে পরদিন হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে চুল ধুয়ে
ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার নারকেল তেল করুন।
এভাবে নারকেল তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে, চুল ঘন হয় এবং শুষ্ক চুলে
আর্দ্রতা বজায় থাকে। তবে আপনি তৈলাক্ত স্ক্যাল্প বা তৈলাক্ত ত্বকের
অধিকারী হলে কম পরিমাণে তেল ব্যবহার করুন।
- ক্যাস্টর অয়েল ও আমন্ড অয়েলের মিশ্রণ ব্যবহার : ক্যাস্টর অয়েল ও আমন্ড অয়েলের ভিটামিন ই ও প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ চুল পড়া কমায় এবং চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। তাই চুলে নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল ও আমন্ড অয়েল ম্যাসাজ জরুরি। সেজন্য একটি পাত্রে সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল এবং আমন্ড অয়েলের মিশ্রণ তৈরী করুন। মিশ্রণটি চুলে লাগান এবং ২ ঘন্টা রাখুন। ২ ঘন্টা পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ক্যাস্টর অয়েল ও আমন্ড অয়েলের মিশ্রণ ব্যবহার করলে চুল পড়া কমে, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং চুল মসৃণ হয়।
- ঘরোয়া আয়ুর্বেদিক হেয়ার অয়েল: চুল পড়া কমাতে বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক উপাদান ব্যবহার করে ঘরে বসেই বানিয়ে নিতে পারেন আয়ুর্বেদিক হেয়ার অয়েল। সমপরিমাণ ভৃঙ্গরাজ, আমলকি এবং নারকেল তেল মিশিয়ে একটি বোতলে রাখুন। সপ্তাহে দুইবার চুলে এই তেল ম্যাসাজ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই চুল পড়ায় পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
- ঘরোয়া হেয়ার টনিক:চুল পড়া কমাতে ঘরোয়া হেয়ার টনিক কার্যকরী। ঘরোয়া হেয়ার টনিক বানাতে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগান। ৩০ মিনিট রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
পেঁয়াজের রস চুলের জন্য কতোটা উপকারী?
পেঁয়াজে সালফার থাকে। এই সালফার চুলের মূল উপাদান কেরাটিন প্রোটিনকে
পুনর্গঠন করে এবং কোলাজেন প্রোডাকশন বাড়ায়। এতে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং
নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে চুল পড়া কমে এবং চুল ঘন হয়। চুলের
বৃদ্ধির জন্য পেঁয়াজের রস ব্যবহার উপকারী।চুল পড়া কমানোর জন্য নিয়মিত পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
এইজন্য পেঁয়াজ কুচি করে রস বের করুন।
রস ছেঁকে একটা পাত্রে নিন। চুলের গোড়ায় পেঁয়াজের রস লাগান এবং ৩০ মিনিট
রাখুন। ৩০ মিনিট পর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফলাফলের জন্য
সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। চুল থেকে পেঁয়াজের গন্ধ দূর করতে ধোয়ার পর
কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।
চুল ঘন ও মজবুত রাখার দীর্ঘমেয়াদী টিপস
সবাই লম্বা, ঘন ও মজবুত চুল চায়। কিন্তু এর জন্য নিয়মিত কিছু নিয়ম মেনে
চলা জরুরি। চুল ঘন ও মজবুত রাখতে নিচের টিপস মেনে চলুন, তাহলে আপনার চুল
থাকবে লম্বা, ঘন, ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: চুলের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চুলের মূল উপাদান প্রোটিন। তাই খাদ্যতালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, ডিম, ডাল, সয়াবিন, মাংস ইত্যাদি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ভিটামিন এ, ই, ডি চুলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ, ডি, ই সমৃদ্ধ ফল-মূল ও শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন। পাশাপাশি আয়রন ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার যেমন পালংশাক, কলিজা, বিটরুট ইত্যাদি খাবার চুলের জন্য খুবই ভালো।
- মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: মানসিক চাপ চুল পড়া এবং চুল ক্ষতিগ্রস্ত হবার অন্যতম কারণ। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা আবশ্যক। মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত ব্যায়াম ও যোগ ব্যায়াম করুন, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। মেডিটেশন ও প্রাণায়াম মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে যা চুলের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
- অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত পণ্য থেকে দূরে থাকা: অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত পণ্য চুলের ক্ষতি করে। তাছাড়া চুলের কালার, পার্ম, স্টাইলিং প্রোডাক্ট, হেয়ার স্ট্রেইটনার চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রাকৃতিক হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত হেয়ার প্রডাক্ট এবং হেয়ার ট্রিটমেন্ট ব্যবহার সীমিত করুন।
- ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট: বায়োটিন, ভিটামিন ডি এবং ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্ট চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে। তাই চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত চুল ধোয়া: সপ্তাহে অন্তত দুইবার ভালোভাবে চুল পরিষ্কার করা আবশ্যক। তবে খুব বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না। প্রাকৃতিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত চুল কাটানো: প্রতি ২ থেকে ৩ মাসে চুলের ভাঙা অংশ কেটে ফেলা চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য রক্ষা করে। তাই প্রতি ২ থেকে ৩ মাস পরপর চুলের ভাঙা অংশ কেটে ফেললে চুল পড়ার ঝুঁকি কমে।
- নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ: মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে নিয়মিত স্ক্যাল্প ম্যাসাজ জরুরি। প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট হালকা গরম তেল হালকা হাতে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
- ধৈর্য্য ও নিয়মিত যত্ন: নিয়মিত যত্ন চুলের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। কোনো পদ্ধতিই তাৎক্ষণিক ফলাফল দেয় না। তাই ধৈর্যসহকারে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চুলের যত্ন নিলে চুল থাকবে সুস্থ ও উজ্জ্বল।
চুল পড়া বন্ধ করতে প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ
অনেকসময় মাথার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ বা সংক্রমণ (Scalp Infection)
দেখা দেয়।ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, অ্যালার্জি, অতিরিক্ত তেল জমা বা
অস্বাস্থ্যকর চুলের যত্নের অভ্যাস এ রোগের মূল কারণ। এর ফলে মাথার ত্বকে
চুলকানি, লালচে দাগ, ফুসকুড়ি, খুশকি বা কখনও ঘা তৈরি হয়। অনেক সময়
অতিরিক্ত ঘাম, ময়লা এবং দূষণের কারণে সংক্রমণ আরও বেড়ে যায়। এসব রোগের
মধ্যে প্রধান হলো সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, টিনিয়া ক্যাপিটিস এবং সোরিয়াসিস।
এসব রোগের কারণে প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে।
এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকেরা
সাধারণত টপিক্যাল এবং মুখে খাওয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকের পরামর্শ
অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত, ধারাবাহিক ব্যবহারে সংক্রমণ; ফলে
চুল পড়া কমবে।
উপসংহার
মাথার ত্বকে কোনো সংক্রমণ বা চর্মরোগ না থাকলে সাধারণত নিয়ম করে
ধারাবাহিকভাবে ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করলে চুল পড়া অনেকাংশেই কমে যায়। তবে
সংক্রমণ বা চর্মরোগ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। চুল পড়া
এবং পাতলা হয়ে যাওয়া একটি বড় সমস্যা হলেও সঠিক উপায়ে নিয়মিত যত্ন নিলে এই
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন নয়। তাই নিয়মিত ধৈর্য ধরে ধারাবাহিকতা বজায়
রাখা এবং সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া স্বাস্থ্যকর
খাদ্যভ্যাস ও জীবনাচরণ মেনে চললে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজতর
হবে।
আজ এ পর্যন্তই আবার দেখা হবে কোন এক নতুন আর্টিকেল নিয়ে।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং একটি কমেন্ট
করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


আপনি নিবোর্ন সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url