গরমের দিনে সুস্থ থাকার কিছু উপায়

গরমের দিনে শরীরকে সুস্থ রাখাটা একটা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তীব্র তাপ, আর্দ্রতা এবং সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের শরীরকে সহজেই দুর্বল করে দেয়। তবে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে এই গরমেও আপনি থাকতে পারেন সতেজ ও সুস্থ। 
এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো গরমকালে সুস্থ থাকার জন্য কিছু কার্যকরী টিপস, যা আপনাকে শরীর ও মন দুটোকেই ভালো রাখতে সাহায্য করবে। চলুন শুরু করা যাক :

পেজ সূচিপত্রঃ গরমের দিনে সুস্থ থাকার জন্য কিছু টিপস

গরমে দিনে সুস্থ থাকতে করণীয় ?

গরমের দিনে শরীরকে সুস্থ রাখাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। সূর্যের তীব্র তাপ এবং অতিরিক্ত ঘাম আমাদের শরীরকে দ্রুত দুর্বল করে দেয়। তবে কিছু সহজ টিপস মেনে চললে এই গরমেও আপনি থাকতে পারেন সতেজ ও কর্মঠ।  নিচে কিছু উদহারণ দেওয়া হলো

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখা। গরমের দিনে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, ফলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা লাগবে । বাইরে গেলে সবসময় সঙ্গে পানির বোতল রাখুন।সাধারণ পানির পাশাপাশি ডাবের পানি, লেবুর শরবত এবং তাজা ফলের রস পান করতে পারেন। তবে চিনিযুক্ত কোমল পানীয় এড়িয়ে চলাই ভালো।

আবার, খাবারের ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। এই সময়ে তৈলাক্ত এবং অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এর পরিবর্তে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার, যেমন সালাদ, দই, সুপ, এবং ফলমূল খান। তরমুজ, শসা, এবং লাউয়ের মতো সবজি শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

গরমের দিনে কেমন পোষাক প্রয়োজন?

গরমের দিনে সুস্থ এবং সতেজ থাকতে সঠিক পোশাক নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। ভুল ধরনের পোশাক পরলে অস্বস্তি বেড়ে যায়, এমনকি হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। এই সময়ে এমন পোশাক পরা উচিত যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং বাতাস চলাচলের সুযোগ দেয়। পোশাকের রঙ, কাপড়ের ধরন এবং স্টাইল এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করে পোশাক নির্বাচন করলে গরমের দিনেও আরামদায়ক থাকা সম্ভব। যেমন:-

হালকা রঙের পোশাক বেছে নিন। সাদা, অফ হোয়াইট, হালকা নীল, গোলাপি বা হলুদ এ ধরনের রঙগুলো সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে, ফলে শরীর কম গরম হয়। কালো বা গাঢ় রঙের পোশাক সূর্যের তাপ শোষণ করে, যা শরীরকে আরও বেশি উত্তপ্ত করে তোলে। তাই দিনের বেলায় গাঢ় রঙের পোশাক এড়িয়ে চলুন।

আবার পোশাকের কাপড় হওয়া উচিত এমন যা ঘাম শোষণ করে সহজে শুকিয়ে যায় এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরা ।আঁটসাঁট বা স্কিন-টাইট পোশাকের বদলে ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন এবং সুতি বা লিনেন কাপড় যেনো হয় । সুতি এবং লিনেন হালকা এবং বাতাস চলাচলের জন্য বা ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার জন্য উপযোগী, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।লম্বা হাতার পোশাক পরলে সরাসরি সূর্যের আলো থেকে ত্বককে বাঁচানো যায়, যা ট্যানিং এবং সানবার্ন প্রতি রোধ করে। অন্যদিকে, সিনথেটিক বা মোটা কাপড়ের পোশাক এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো বাতাস আটকে রাখে এবং ঘাম শোষণ করতে পারে না, ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ হতে পারে।

গরমে কি কি শারীরিক সমস্যা হতে পারে?

তীব্র গরমে কেবল অস্বস্তিই হয় না, বরং এটি আমাদের শরীরের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সূর্যের তীব্র তাপ এবং বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে শরীর থেকে দ্রুত জল ও লবণ বেরিয়ে যায়, যা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। এসব সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা। এর ফলে মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, ক্লান্তি এবং প্রস্রাব কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। যদি এই অবস্থা বেশি সময় ধরে চলে, তবে কিডনির ওপর চাপ বাড়তে পারে। এছাড়াও, গরমে শরীর থেকে ঘাম বের হতে না পারলে হিট র‍্যাশ বা ঘামাচি হতে পারে, যা ত্বকে ছোট ছোট লাল ফুসকুড়ি সৃষ্টি করে এবং চুলকানির কারণ হয়।

আরো পড়ুনঃ  ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করার  উপায়?

আরও  শারীরিক সমস্যা হলো হিট ক্রাম্পস, যা পেশিতে টান বা খিঁচুনি হিসেবে দেখা দেয়। এটি মূলত ঘামের সাথে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার কারণে হয়। এই সমস্যাগুলো যদি সময়মতো সমাধান না করা হয়, তবে তা হিট এগজশন এর দিকে এগোতে পারে। হিট এগজশনের লক্ষণগুলো হলো:

অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, দ্রুত হৃদস্পন্দন। এটি যদি আরও গুরুতর রূপ নেয়, তবে তা হিট স্ট্রোক-এ পরিণত হতে পারে, যা একটি প্রাণঘাতী অবস্থা। হিট স্ট্রোকের সময় রোগীর শরীরের তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়, ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। তাই তীব্র গরমে এই ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে বাঁচতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা এবং ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার মতো সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

গরমের দিনে কী খাবেন আর কী এড়িয়ে চলবেন?

গরমের সময় শরীরকে সুস্থ ও ঠান্ডা রাখতে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল খাবার খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই এই সময়ে এমন খাবার বেছে নিতে হবে যা শরীরকে ভেতর থেকে শীতল রাখে এবং পুষ্টি যোগায়।

গরমের দিনে কী খাবেন:

  • জলীয় ফল ও সবজি: এই সময়ে বেশি বেশি জলীয় ফল, যেমন তরমুজ, শসা, কমলা, বাঙ্গি এবং ডাব খান। এসব ফলে প্রচুর পরিমাণে জল এবং প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট থাকে যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। শসা, লেটুস এবং টমেটোর মতো সবজি সালাদ হিসেবে খেতে পারেন
  • হালকা ও সহজপাচ্য খাবার: দই, পান্তা ভাত, হালকা সবজির সুপ এবং ডাল জাতীয় খাবার খাওয়া ভালো। দই প্রোবায়োটিক হিসেবে কাজ করে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
  • লেবুর শরবত ও পুদিনা: লেবুর শরবত শরীরকে সতেজ রাখতে দারুণ কাজ করে। পুদিনা পাতা, ধনে পাতা বা তুলসি পাতা দিয়ে তৈরি শরবতও শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

গরমের দিনে কী এড়িয়ে চলবেন:

  • অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার: ফাস্ট ফুড, ভাজাভুজি এবং অতিরিক্ত তেল ও মশলা দেওয়া খাবার হজমের জন্য ভারী হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে পারে।
  • ক্যাফেইন ও চিনিযুক্ত পানীয়: কফি বা অতিরিক্ত চিনিযুক্ত কোমল পানীয় সাময়িকভাবে শরীরকে ঠান্ডা মনে হলেও, এগুলো আসলে ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।
  • রেড মিট ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: রেড মিট হজম হতে বেশি সময় নেয় এবং শরীরে তাপ তৈরি করে। তাই এই ধরনের খাবার গরমে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।

গরমের দিনে হালকা ব্যায়াম? 

গরমের দিনে ব্যায়ামের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকাল অথবা সন্ধ্যা, যখন তাপমাত্রা কম থাকে। এই সময়গুলোতে ব্যায়াম করলে হিট স্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কমে যায়। দিনের মধ্যভাগে বা যখন রোদ খুব তীব্র থাকে, তখন ব্যায়াম এড়িয়ে চলাই ভালো।

ব্যায়াম: গরমের দিনে দৌড়, সাইক্লিং, এবং অ্যারোবিক্সের মতো হালকা ব্যায়াম বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও, হাঁটা, স্ট্রেচিং এবং যোগা খুব উপকারী। সাঁতার হলো গরমের দিনের জন্য অন্যতম সেরা ব্যায়াম। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং একই সাথে পুরো শরীরের জন্য একটি চমৎকার ব্যায়াম।

উপসংহার

গরমের দিনে সুস্থ থাকা একটি চ্যালেঞ্জ হলেও, কিছু সহজ অভ্যাস মেনে চললে এই সময়েও শরীর ও মনকে সতেজ রাখা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান এবং হালকা পোশাক পরিধানএই বিষয়গুলো গরমে সুস্থ থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তীব্র রোদ এড়িয়ে চলা এবং দিনের শীতলতম সময়ে বাইরে বের হওয়া ভালো। সব মিলিয়ে, এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো আমাদের শরীরকে অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা করতে পারে এবং গরমের দিনগুলোতেও আমাদের কর্মক্ষম ও প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পোষ্ট পড়ে ভালো লাগলে একটি মন্তব্য এবং আপনার বন্ধুর শেয়ার করুন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি নিবোর্ন সাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url